সোমবার, ১৫ পৌষ, ১৪৩১ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরে আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবকে এশিয়ার অন্যতম প্রধান একটি চলচ্চিত্র উৎসব হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া বছরের সেরা ছায়াছবি ও চলচ্চিত্রকর্মীদের পুরস্কৃত করার বার্ষিক এই আয়োজন ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র অনুরাগীদের মনোযোগ আকৃষ্ট করলেও মূলত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে উৎসাহিত করায় এই উৎসবের অবদান এখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শুরুতে প্রায় ১০ দিন ধরে চলা এই উৎসবে বিভিন্ন বিভাগে সেরা ছবি ও নির্মাতাদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি সার্বিক স্বীকৃতির কয়েকটি পুরস্কারও প্রদান করা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে এশিয়ার বর্ষসেরা চলচ্চিত্র নির্মাতার পুরস্কার। পুরস্কারের বিভিন্ন বিভাগের জন্য জমা হওয়া ছবির মধ্যে বিজয়ী ছায়াছবি ও অভিনেতা-নির্মাতাদের নাম উৎসবের শেষ দিনে ঘোষণা করা হলেও সার্বিক অবদানের জন্য বেছে নেয়া বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় উৎসব শুরু হওয়ার প্রথম দিন।
এ বছরের ২৯তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য জমা দেয়া ছবির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেলেও প্রাথমিক বাছাইপর্বে এসব ছবির মধ্যে থেকে ২৭৯টি ছবিকে বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগিতা ছাড়াও দর্শক উপস্থিতিতে প্রদর্শনের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে।

কিম জিসোয়েক পুরস্কার হচ্ছে উৎসবের মূল পুরস্কার বিভাগ। এ বছর এই বিভাগের জন্য মনোনীত আটটি ছবির মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার দুইটি এবং জাপানের দুইটি ছবি ছাড়াও আরও আছে কিরগিস্তান, তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও ভারতের একটি করে ছবি। চলতি মাসের ১১ তারিখে উৎসবের শেষ দিনে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। মূল পুরস্কার বিভাগের বাইরে আরও যে কয়েকটি বিভাগের জন্য মনোনয়ন পাওয়া বিভিন্ন ছবি ও এর নির্মাতা-কুশলীদের পুরস্কৃত করা হবে, সেই বিভাগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এশিয়ার নবীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য বিশেষ বিভাগ ‘নিউ কারেন্ট’, এবং এশিয়া মহাদেশের বাইরের নবীন নির্মাতাদের প্রতিযোগিতার বিভাগ ‘ফ্ল্যাশ ফরওয়ার্ড’।

২ অক্টোবর বুধবার শুরু হওয়া উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এশিয়ার বর্ষসেরা চলচ্চিত্র নির্মাতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ বছর এই পুরস্কার পাচ্ছেন জাপানের বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা কুরোসাওয়া কিইয়োশি। পারিবারিক পদবির মিল থেকে গেলেও বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম দিকপাল হিসাবে পরিচিত প্রয়াত জাপানি নির্মাতা কুরোসাওয়া আকিরার সঙ্গে আত্মীয়তার কোনো রকম যোগাযোগ পরবর্তী প্রজন্মের এই কুরোসাওয়ার নেই।

তবে অনেকটা কাকতালীয়ভাবে ছায়াছবির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর তিনি ইতিমধ্যে রেখে গেছেন এবং কেবল জাপানেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছায়াছবির অঙ্গনে তিনি এখন হয়ে উঠেছেন খুবই পরিচিত এক ব্যক্তিত্ব। গত এক বছরে এশিয়ার চলচ্চিত্র শিল্প ও সংস্কৃতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখার জন্য এবারের বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজক কমিটি পুরস্কারের জন্য তাঁকে বেছে নিয়েছে। এ বছর নতুন যে দুটি ছবি তিনি ইতিমধ্যে নির্মাণ করেছেন, সেগুলো হচ্ছে ‘সেরপান্ট’স পাথ’ ও ‘ক্লাউড’। উৎসব চলাকালে দর্শকরা ছবি দুটি দেখার সুযোগ পাবেন।
কুরোসাওয়া কিইয়োশির জন্ম পশ্চিম জাপানের কোবে শহরে ১৯৫৫ সালে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় আট মিলিমিটারের ফিল্মে নিজের তৈরি একটি কাহিনি ছবির মধ্যে দিয়ে ছায়াছবির জগতে তার প্রবেশ। নিষ্ঠুরতা ও বিভীষিকা তার ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে অবশ্য আধুনিক জাপানি সমাজে মিথ্যা ও ভণ্ডামির ব্যাপক উপস্থিতি ছাড়াও ঐতিহাসিক বাস্তবতার আলোকে সমাজে বিরাজমান ভ্রান্ত বাস্তবতার প্রতিফলন তুলে ধরতে প্রয়াসী হতে দেখা গেছে। কান, ভেনিস ও লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর ছবি ইতিমধ্যে পুরস্কৃত হয়েছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version