রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা না-থাকার প্রশ্নে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না অন্তর্বর্তী সরকার। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজছে। তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে অনড় রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই বলে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের মন্তব্য সম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেই মন্তব্যকে ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি ওঠে। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ তৈরি হয়। সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এমন পটভূমিতে গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করা হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা থাকা না-থাকার বিষয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
অন্য দুজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ব্যাপারে ছাত্রদের দাবি রয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং সেটা তারা চায় না। এ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে। এর ফলে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন বলে সরকার মনে করছে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে গতকালই প্রথম অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হলো। এর আগে গত সোমবার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।’
এ বিষয়ে নানা আলোচনার মধ্যে গত বুধবার দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অবস্থান জানিয়েছেন। দলটি এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রপতি পদে শূন্যতা হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় সরকারের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য তুলে ধরেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হবে না। আবার তাড়াহুড়ো করা হবে না। শিগগিরই নেওয়া হবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন, সেটা আমাদের নজরে আনা হয়েছে। আবার তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে, গণদাবি তৈরি হয়েছে, সেটাও বিবেচিত হচ্ছে।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক দল সাংবিধানিক সংকটের কথাও বলছে। একটি দলের কয়েকজন নেতা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। আবার ওই রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক সংকট হবে না। এটা আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।’
এ বিষয়ে নানা আলোচনার মধ্যে গত বুধবার দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অবস্থান জানিয়েছেন। দলটি এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রপতি পদে শূন্যতা হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি মানতে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটিও। তারা দাবিতে অটল থাকার কথা বলছে। পাঁচ দফার দ্বিতীয় দাবি ছিল ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, সেটা পূরণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতারা জানান, রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে এ মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হোক, সেটা তাঁদের কাম্য নয়। বিএনপির এ অবস্থানে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। মূলত এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেই বুধবার সন্ধ্যায় যৌথ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল তারা। সেখান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানান দুই সংগঠনের নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে তাঁরা এখনো অনড়। আজ শুক্রবার তাঁরা বৈঠক করে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।