শরতের বাতাসে এখন পূজার আমেজ। ষষ্ঠী থেকে দশমী—এই পাঁচ দিন পূজামণ্ডপ আর বাইরে বাইরে কাটবে অনেকটা সময়। সারা দিন ঘোরার ফলে শরীরের মতো ত্বকও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ঘরে বসেই চটজলদি করা যায়, এমন কিছু সহজ টিপস মেনে চললে উৎসবের দিনগুলোয় আপনার ত্বক ও চুল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। চটজলদি রূপচর্চার এমন কিছু পরামর্শ দিলেন পারসোনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত খান।
ত্বক
সানস্ক্রিন ব্যবহারে কোনো আপস করা যাবে না। মেকআপ করার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সানস্ক্রিন ঠিকভাবে ত্বকে বসে যাওয়ার পর মেকআপ শুরু করা উচিত। সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি থেকে মুক্তি পেতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অন্তর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।
পূজায় সারা দিন ঘোরাঘুরি আর রাত জেগে প্রতিমা দেখার ফলে অনেকেরই ৮ ঘণ্টা ঘুম হয় না। এ কারণে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মুখে ফোলা ভাব থাকে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বরফ বেশ কাজের। বরফজলে বা ঠান্ডা পানিতে মুখ কিছু সময় ডুবিয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যায়, আস্তে আস্তে ফোলা ভাবও কমে আসে। পাশাপাশি রোদে ত্বক পোড়া ভাব কমাতেও বরফ বেশ উপকারী। তবে রোদে ত্বক যদি খুব বেশি পুড়ে যায় বা ট্যান ভাব হয়, তাহলে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে হবে।
রূপচর্চায় কোনোভাবে ময়েশ্চারাইজার বাদ দেওয়া যাবে না। তবে ত্বক যাঁদের তৈলাক্ত, তাঁরা পানি বা জেলযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। ঘামের সমস্যা কম হবে।
রোজ ঠোঁটে লিপবাম লাগাতে হবে। তা ছাড়া এখন দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ক্রিম, ভিটামিন সি, গ্রিন টি আছে এমন ক্রিম ব্যবহারের ফলে চারপাশের দূষণ থেকে ত্বককে ভালো রাখা যায়। হাতের জন্য ব্যাগে এ সময় হ্যান্ডক্রিম রাখুন।
যতই ক্লান্তি থাকুক না কেন; সব সময় বাইরে থেকে এসে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। মেকআপ না তুললে মুখে ময়লা জমে ব্রণ, র্যাশসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ফেস মাস্ক ব্যবহার খুবই জরুরি। ক্যামোমাইল, ওটমিল মাস্ক ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে। এ ছাড়া মসৃণ ত্বকের জন্য কুলিং জেল, অ্যালোভেরা জেল, টোনার এসব নিত্যসঙ্গী হওয়া উচিত। যেহেতু পূজায় টানা ৪ থেকে ৫ দিন ত্বকের ওপর ধকল যাবে, তাই অন্তত এক দিন এক্সফলিয়েট করে নিতে পারেন। এতে করে ত্বক যেমন সতেজ থাকবে, অন্যদিকে ত্বকের জেল্লাও বজায় থাকবে।
পূজায় রাতের সাজে কাজলের ব্যবহার করতে পারেন
সাজের ক্ষেত্রে দিন ও রাতের মেকআপেও রয়েছে ভিন্নতা। সারা দিন চেহারায় সতেজ ভাব ধরে রাখতে হালকা মেকআপ করুন। অতি রঙিন ও উজ্জ্বল আইশ্যাডো ব্যবহার না করাই ভালো। দিনের বেলায় ঘাম বেশি হয়, ভারী মেকআপ করলে চেহারার অতি চকচকে ভাব বেড়ে যায়, দেখতে ভালো লাগে না। হালকা মেকআপ করে সীমিত চোখের সাজ বজায় রাখুন। প্রয়োজনে চোখে আইলাইনার পরতে পারেন। দিনের সাজের সময় ম্যাট লিপস্টিক আর ব্লাশঅন একদমই হালকা রাখবেন। সারা দিনের জন্য মেকআপ করলে সেটা ম্যাট হলে ভালো। অন্যদিকে রাতে পূজামণ্ডপে গেলে ভারী সাজতে পারেন। পূজায় রাতের সাজে কাজলের ব্যবহার সৌন্দর্যের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। আবহাওয়ায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি, পূজায় প্রচুর ঘোরাঘুরি হয়, পরিমিত সাজ ও আরামদায়ক পোশাক পরার পরামর্শ দেন নুজহাত খান।
চুল
এই রূপবিশেষজ্ঞ আরও জানান, চুলে শ্যাম্পু করার আগে মাথায় তেল দিয়ে ভালোভাবে মালিশ করে নিতে হবে। তাড়াহুড়া থাকলে শ্যাম্পু করার কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে তেল দিতে হবে। যাঁদের খুশকি বেশি, তাঁরা ১ ভাগ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ৪ ভাগ পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাথার তালুতে ঘষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করলে উপকার পাবেন। যাঁদের চুল শ্যাম্পু করার পরে তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে যায়, তাঁরা চুলে সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
সঠিক জীবনধারা
নুজহাত খান উল্লেখ করেন, ত্বক ও চুলের প্রকৃত উজ্জ্বলতা আসে ভেতর থেকে। তাই পূজার আগে থেকেই ত্বকের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। পরিমিত পানি পান, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও দুশ্চিন্তাহীন জীবনযাপন শুরু করুন। দিনে অন্তত চার লিটার পানি পান করুন। তেল ও মসলাজাতীয় খাবার এড়িয়ে
ভিটামিন সি, গ্রিন টি আছে এমন ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন
চলুন এই কয়েক দিন। বেশি করে ফলমূল ও শাকসবজি খান। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। বাইরে গেলে সঙ্গে রাখুন সানগ্লাস, ওয়াইপস, সানস্ক্রিন, ছোট পানির বোতল আর ছাতা। এসব নিয়ম মেনে চললে চেহারায় থাকবে সতেজ ভাব।
সুদেষ্ণা অর্পা