সোমবার, ১৫ পৌষ, ১৪৩১ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে গত বছরের মে মাসে শুরু হয় ‘‌বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প’। দেশের ইতিহাসে সড়ক নিরাপত্তায় গৃহীত সবচেয়ে বড় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের ঋণে। প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা (৩৫৮ মিলিয়ন ডলার)। কাজ শুরুর এক বছর পেরিয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এর মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের ঋণ থেকে ৭৫ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সওজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় কাজের পরিধি কমিয়ে আনতে হবে।

সওজ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে নিরাপদ সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ পুলিশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সবচেয়ে বেশি কাজ সওজ অধিদপ্তরের। সংস্থাটি ৫ হাজার ২০০ কিলোমিটার মহাসড়কের নিরাপত্তার মান যাচাই করে সেগুলোর রেটিং করবে। এর মধ্যে ৫৯টি জাতীয় ও ৬৫টি আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে। এর বাইরে পরীক্ষামূলকভাবে নিরাপদ করিডোর হিসেবে গড়ে তোলা হবে জাতীয় মহাসড়ক এন-৪-এর গাজীপুর-টাঙ্গাইল অংশের ৭০ কিলোমিটার ও এন-৬-এর নাটোর-নবাবগঞ্জের ৭০ কিলোমিটার অংশ। সড়ক দুটির প্রকৌশলগত নকশা উন্নয়ন, সাইন ও মার্কিং স্থাপন, পথচারী চলাচল সুবিধা বৃদ্ধি, গতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চালু করা হবে জরুরি সেবা। পাশাপাশি নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ করবে সংস্থাটি। সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে সওজ অধিদপ্তরের অনুকূলে সব মিলিয়ে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে নিরাপদ সড়ক প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬৪ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করবে বিআরটিএ। প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্থাটি দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য স্বতন্ত্র একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেবে ৬০ হাজার চালককে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তুলবে দেশজুড়ে। এর বাইরে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ নামে পৃথক একটি সংস্থা গড়ে তুলবে।

পরীক্ষামূলকভাবে নিরাপদ করিডোর হিসাবে গড়ে তোলা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও পাবনা-রাজশাহী জাতীয় মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ। এজন্য তৈরি করা হবে একটি স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা বলয়। সড়কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চিহ্নিত, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরবরাহ করা হবে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। পাশাপাশি মহাসড়ক দুটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলসহ মহাসড়ক দুটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সারা দেশে দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিসংখ্যান সংবলিত একটি জাতীয় তথ্যভাণ্ডারও গড়ে তুলবে বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের জন্য গড়ে তোলা হবে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সব মিলিয়ে সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে পুলিশের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩৪১ কোটি টাকা।

সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জন্য। এ টাকায় সংস্থাটি বিভিন্ন হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য জরুরি রুমের ব্যবস্থা করবে। কেনা হবে ৬০টি লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স ও ৪০ মোটরসাইকেল অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন মেডিকেল সরঞ্জাম। প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি কলসেন্টার পরিচালনা করবে এবং চিকিৎসাকর্মীদের জন্য ব্যবস্থা করবে বিশেষ প্রশিক্ষণের।

২০২৩ সালের মে মাসে প্রকল্পটি শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ভৌত অগ্রগতি হয়নি। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। যদিও প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হলেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপদ সড়ক প্রকল্পের পরিচালক মো. আমানুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রকল্পের একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে কেনাকাটা। এর জন্য আমরা দরপত্র প্রক্রিয়াগুলো শুরু করেছি। কেনাকাটা সম্পন্ন হলে প্রকল্পের অগ্রগতি এক লাফে অনেক বেড়ে যাবে।’

বাস্তবায়নে ধীরগতির মধ্যেই নিরাপদ সড়ক প্রকল্পের জন্য বড় দুঃসংবাদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সওজ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য প্রতিশ্রুত ঋণ থেকে ৭৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে চলমান অন্য প্রকল্পে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজের পরিধিও কমে যাবে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা। এরই মধ্যে প্রকল্পটির জন্য ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা বাতিলের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। সওজ অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তারা আশা করছেন, কাজের পরিধি কমে এলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version