প্রায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার পরও গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে বেড়েছে বাজার মূলধন। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৫০ পয়েন্ট। এছাড়া লেনদেন কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ।
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটি শেয়ারবাজারের নবম সপ্তাহ। এর আগে অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে আরও আট সপ্তাহ পার করেছে শেয়ারবাজার। এ সরকারের অধীনে লেনদেন হওয়া মোট নয় সপ্তাহের মধ্যে আট সপ্তাহেই শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক কমেছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ বড় দরপতন হয়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহে আবার দরপতন হয়। এরপর পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সপ্তাহেও অব্যাহত থাকে দরপতনের ধারা।
গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে অর্থাৎ অন্তর্র্বতী সরকারের অষ্টম সপ্তাহে ডিএসইতে মাত্র ৫৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ৩৩১টির। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
এমন পতরে পর গত সপ্তাহে দাম বাড়ার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২১১টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৬টির। এছাড়া ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এরপরও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৭২ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৩০১ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ১৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা বা এক দশমিক ৯৭ শতাংশ। তার আগে সপ্তাহে কমে ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বা এক দশমিক ৪৩ শতাংশ।
দাম বাড়ার তালিকায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকার পরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ৪০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৭৬ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। তার আগের সাত সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৬২ পয়েন্ট। আন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া নয় সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সব মিলিয়ে কমেছে ৫০২ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৫ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৭৪ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৪১ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এছাড়া ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ১৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা এক দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪০ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ।
সবকয়টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৬৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৫৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, টেকনো ড্রাগস এবং ইবনে সিনা।