শনিবার, ২০ পৌষ, ১৪৩১ | ৪ জানুয়ারি, ২০২৫

‘মেয়েদের গোছলের টাইম, সকাল ৮ ঘটিকা থেকে ১০ ঘটিকা পর্যন্ত। বি.দ্র. পুরুষরা ১০০ হাত দূরে থাকুন।’—একটি ব্যানারে লেখা। জনপ্রিয় ‘ভবের হাট’ ধারাবাহিক নাটকে ন্যাটা চরিত্রের অভিনেতা আ খ ম হাসানকে পুকুরপাড়ে ব্যানারটি লাগাতে দেখা যায়। সেই সময়েই পুকুরে মুখ ধুতে আসেন আশান খাঁ। কিন্তু সকাল ৮টা পেরিয়ে যাওয়ায় আশান অনেক অনুরোধ করেন পুকুরঘাটে যেতে। ‘এখনো মেয়েরা কেউ আসেনি, যাবে আর আসবে’—এই বলে অনেক অনুনয়-বিনয় করেও কোনো লাভ হয় না। তাকে একপর্যায়ে জাপটে ধরে নিয়ে যায় ন্যাটা। ধারাবাহিকের এই প্রথম দৃশ্য থেকে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় করে দর্শকদের নজর কাড়েন এই আশান খাঁ চরিত্রের অভিনেতা শামীম হাসান। পরবর্তী সময়ে তিনি নাটক থেকে হারিয়ে যান।

‘ভবের হাট’ নাটকের গুণী অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামান, হুমায়ুন ফরীদি, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, রহমত উল্লাহ, ফজলুর রহমান বাবু, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, দিতি, তানিয়া আহমেদদের সঙ্গে অনেক দৃশ্যে সমান তালে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন এই তরুণ। প্রথম ধারাবাহিকেই চমক দেখানো সেই তরুণের দর্শক বাড়তে থাকে। রাস্তাঘাটে শুনতে হতো, ‘আপনি আশান খাঁ না? এ টি এমের ছেলে।’

ভক্তদের কাছে আলোচনার পাত্র হওয়া এই তরুণ হঠাৎ করেই অভিনয় থেকে দূরে সরে যান। একসময় তাঁকে আর কোনো পর্বে দেখা যায়নি। মর্মাহত হন দর্শকেরা।
পরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এই অভিনেতা আর নেই। সেই গুজব এখনো চলছে। প্রায়ই ফেসবুকে নাটক–সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোতে দেখা যায়, সেই আশান খাঁর ছবি পোস্ট করে কেউ লিখেছেন, এই অভিনেতা অকালপ্রয়াত হয়েছেন। কেউ কেউ মন্তব্যে দুঃখ প্রকাশ করে লেখেন, ‘পছন্দের অভিনেতা ছিল।’ আবার কেউ লেখেন, ‘তিনি এখনো বেঁচে আছেন।’ তবে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। হঠাৎ পর্দা থেকে উধাও হয়ে যাওয়া সেই আশান খাঁ এখন কোথায়? জানার জন্য নাটকের পরিচালক ও অভিনেতা সালাহউদ্দিন লাভলুর দ্বারস্থ হয়ে হতাশ হতে হয়।

সালাহউদ্দিন লাভলু জানান, ‘অনেক দিন হলো ওর সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সে শিক্ষকতা করে, এটা শুনেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘শামীম দারুণ অভিনয় করেছিল। সে নতুন, এটা কেউই বুঝতে পারেনি। দর্শকদের কাছ থেকে তুমুল সাড়াও পাচ্ছিল। হঠাৎ করে একদিন শুনি, সে অভিনয় করবে না। আমরা সবাই আকাশ থেকে পড়লাম। আমাদের সেটের সবাই তাকে বুঝিয়েছি। কিন্তু সে একপর্যায়ে আর ভবের হাট নাটকের সঙ্গে যুক্তই হলো না। কেন যে দূরে সরে গেল, এটা এখনো একটা রহস্য বলা যায়।’

২০০৪ সালের কথা। তখন গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রের জন্য তরুণ মুখ খুঁজছিলেন সালাহউদ্দিন লাভলু। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দম্পতি ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও রহমত উল্লাহর কাছ থেকে ছেলেটির তথ্য পান। প্রথম দেখায়ই মারেম খাঁ পরিবারের ছোট ছেলে আশান খাঁ চরিত্রের জন্য পছন্দ করেন লাভলু। পরে শামীমকে নিয়েই শুরু হয় শুটিং। এই পরিচালক বলেন, ‘আমি এখনো তাকে খুঁজছি। কাস্টিংয়ের জন্য। শুনেছি, সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক। অনেক দিন ধরেই তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। এত মেধাবী, সম্ভাবনাময় একজন অভিনেতা হারিয়ে গেল। অথচ আজ তার কোথায় থাকার কথা ছিল। সেই সময় এ টি এম, ফরীদি ভাইসহ সবাই তাকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু পরীক্ষা আর কী কী যেন বলে যায়। তখন কষ্ট লেগেছিল।’

দীর্ঘদিন পরে সেই শামীম হাসানকে পাওয়া গেল। তিনি এখন যুক্তরাজ্যে পিএইচডি করছেন। আগে জানালেন, অভিনয় থেকে দূরে সরলেও নাটকের ওপর পড়াশোনা নিয়মিত করে যাচ্ছেন। জানতে চাই, ‘আপনাকে নিয়ে তো অনেক গুজব ছড়িয়েছে, সেগুলো কতটা জানেন?’ প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, ‘প্রায়ই শুনি, নাটকের বা সিনেমার বিভিন্ন গ্রুপে আমার সেই ভবের হাটের ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, আমি নাই। আমি যে ফেসবুকে কতবার মারা গেছি, তার হিসাব নাই। যদিও আমার শিক্ষার্থীরা একাধিকবার সেসব গ্রুপে জানিয়েছে, আমার বর্তমান অবস্থা। তারপরেও গুজব ছড়িয়েছেই। কারণ, আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না। কোনো মন্তব্যও কখনো করিনি।’

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version