মুলতান টেস্টে আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা চলছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা চলছি একটি বিষয়ে। মুলতানে যা দেখা যাচ্ছে, সেটা তো আরব আমিরাতের দুবাইয়ে দেখা যায়। রোদের উত্তাপ, ফ্ল্যাট পিচ এবং প্রথম ইনিংসেই স্কোরবোর্ডে রানের পাহাড়। আরও একটি ব্যাপার—টনি হেমিং। দুবাইয়ে পিচ কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করা এই অস্ট্রেলিয়ান এখন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান পিচ কিউরেটর। মুলতানে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের রানপাহাড় দেখে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই।
৮৬ ওভারে ৪ উইকেটে ৩২৮ রানে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছিল পাকিস্তান। সেদিনের শিরোনাম ছিলেন দুই সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক শান মাসুদ (১৫১) ও আবদুল্লাহ শফিক (১০২)। আজ দ্বিতীয় দিনে আরও ৬৩ ওভার ব্যাট করে পাকিস্তান। সালমান আঘার অপরাজিত সেঞ্চুরিসহ দ্বিতীয় দিনে তুলেছে আরও ২২৮ রান। সব মিলিয়ে ১৪৯ ওভারে ৫৫৬ রানে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় শান মাসুদের দল।
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কোচ হয়ে আসার পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০০ ছাড়ানো স্কোর হলো। আগের দুবার কিন্তু ইংল্যান্ড জিতেছে।
সাড়ে পাঁচ সেশন ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভারে ১ উইকেটে ৯৬ তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থেকে এখনো ৪৬০ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা। ক্রিজে ৬৪ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত ক্রলি। ৩২ রানে অন্য প্রান্ত ধরে রেখেছেন রুট।
পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যান আবরাহ আহমেদের ক্যাচ স্লিপে ধরতে গিয়ে আঙুলে ব্যথা পাওয়ায় বেন ডাকেট ওপেন করতে পারেননি। জ্যাক ক্রলির সঙ্গে তাই ওলি পোপকে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই প্রথম ওপেনিংয়ে নামা পোপকে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মিড উইকেটে ক্যাচ বানিয়ে দিনটা নিজের জন্য আরও রঙিন করে তোলেন পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহ। তবে এরপর আর উইকেট পড়েনি ইংল্যান্ডের। দ্বিতীয় উইকেটে ৯২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন পাড়ি দেন ক্রলি ও রুট।
সাদা পোশাকে নাসিম শাহ রঙিন দিনের কথা বলা হচ্ছিল। ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে ছয়ে ব্যাটিংয়ে নামা এই পেসার কাল ০ রানে অপরাজিত ছিলেন। আজ প্রথম সেশনে ১৯.৪ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে কাটিয়ে দেন নাসিম! দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ক্রিজে কাটিয়ে ৮১ বলে তাঁর ৩৩ রানের ইনিংসটি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেই সর্বোচ্চ। সৌদ শাকিলের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে নাসিমের ১২৯ বলে ৬৪ রানের জুটিকে পাকিস্তানের পাঁচ শ পেরিয়ে যাওয়ার ভিতও বলতে পারেন। ৮২ রান করা সৌদ সেঞ্চুরির সুবাস পেতে পেতে স্লিপে ক্যাচ দেন শোয়েব বশিরের দারুণ এক ডেলিভারিতে। তখন ব্যক্তিগত ৩৬ রানে ক্রিজে প্রায় ‘সেট’ হয়ে গিয়েছিলেন সালমান।
ক্যারিয়ারের ১৫তম টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক টপকে যাওয়া এই স্পিন অলরাউন্ডার টেস্টে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিও তুলে নেন। ইনিংসটি আরও বড় হতো, তবে অন্য প্রান্ত থেকে উইকেট পড়ে যাওয়ায় সালমান আর এগোতে পারেননি। ১০৪ রানেই অপরাজিত ছিলেন। সালমানকে ৯ম উইকেটে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন শাহিন আফ্রিদি। দুজনের ৮৫ রানের জুটিতে আফ্রিদির অবদান ৪৯ বলে ২৬।
পাকিস্তানের ১০ উইকেট সমান ভাগ করে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের বোলাররা। স্পিনারেরা নিয়েছেন ৫ উইকেট, পেসারেরাও তা–ই। এর মধ্যে ৪০ ওভার বোলিং করে ১৬০ রানে ৩ উইকেট নেওয়া জ্যাক লিচ সেরা পারফরমার। তবে এই টেস্টের ফল কী হয়, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা। হাতে আছে আর তিন দিন। ইংল্যান্ডের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ক্রলি ও রুটকে দেখে মনে হয়নি ব্যাটিং খুব কঠিন। কেউ কেউ এখনই মুলতান টেস্টে অবশ্য ড্র দেখছেন। তবে একটি পরিসংখ্যান জানা থাকলে পাকিস্তান কিন্তু সাবধান হবে।