শনিবার, ২০ পৌষ, ১৪৩১ | ৪ জানুয়ারি, ২০২৫

নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, দেশে প্রয়োজনে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে। এটি গণতান্ত্রিক রীতি।

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। লন্ডন থেকে তিনি সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে বিএনপি সব গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। বিএনপি তার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সব পরিস্থিতিতে সব সময় বহু দল-বহুমতের চর্চার পক্ষে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্বচ্ছ। জনগণ কোন রাজনৈতিক দলকে গ্রহণ করবে কিংবা বর্জন করবে, নির্বাচনের মাধ্যমে সেই রায় দেবে। কিন্তু যারা জনগণের আদালতের মুখোমুখি হতে ভয় পায় অথবা তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা ধৈর্য হারাবেন না। নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকুন। নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে, এই বিশ্বাস রাখুন।’

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না, বরং সতর্ক থাকবেন। নিজেরা এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবেন না, যাতে কেউ অপপ্রচারের সুযোগ পায়। নিজেকে জনগণের আস্থায় রাখুন।’

এ প্রসঙ্গে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ছাত্র–জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে মাফিয়াপ্রধানের পালিয়ে যাওয়ার পর প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সামনে এবার জনগণের কাঙ্ক্ষিত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক দেশে গড়ার পালা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো যার যার দলীয় আদর্শ-কর্মসূচি উপস্থাপন করবে। জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে। এটিই গণতান্ত্রিক রীতি।

তারেক রহমান বলেন, এমন অবস্থায় কোনো কোনো মহল থেকে সংস্কার নাকি নির্বাচন—এমন জিজ্ঞাসাকে বিএনপি তথা দেশপ্রেমিক সব মানুষ স্রেফ অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কূটতর্ক বলে বিবেচনা করে। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার এবং নির্বাচন—উভয়ই প্রয়োজন। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে সংস্কার একটি অনিবার্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একইভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টেকসই এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পন্থা।

নির্বাচন রাষ্ট্রে জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করে বলেও মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা পুঁথিগত সংস্কার কিছুই টেকসই হয় না।

সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই প্রয়োজন—এ মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দৃষ্টিতে অনেক বড় বড় সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে এসব কর্মসূচির আড়ালে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা উপেক্ষিত থাকলে জনগণ হয়তো খোদ সরকারের সংস্কার দাবি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হবে। ইতিমধ্যে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে, পলাতক স্বৈরাচারের আমলের সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট আমলে দায়ের করা লাখ লাখ মামলায় এখনো কেন প্রতিদিন অকারণে মানুষকে আদালতের বারান্দায় ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার তাদের সংস্কার বা গৃহীত পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে ষড়যন্ত্রকারী চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা বিনষ্টের সুযোগ নেবে।

তারেক রহমান আবারও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হোক, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তা দেখতে চায় না। এ কারণে জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।

আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বিশেষ অতিথি ছিলেন। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শামসুজ্জমান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমানউল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির, নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদউদ্দীন চৌধুরী, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন, আবদুল কাদের ভূঁইয়া, হাবীবুর রশীদ প্রমুখ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version