পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কাজ শুরু হয়ে গেছে। টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, একটি কমিটিও আছে।’
তবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে ওয়াশিংটন থেকে কারিগরি সহযোগিতা নেওয়া হবে- এমন ইঙ্গিত দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে অলরেডি (ইতোমধ্যে) একটা টাস্কফোর্স আছে এবং গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে। এটার জন্য কিছু কারিগরি সহযোগিতা লাগবে। উনি ওয়াশিংটন গেছেন, আমরাও যাচ্ছি। ওখান থেকে আনা হবে। অতএব এটা আমাদের একটা প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)। এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে।’
গতকাল সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতার বৈঠক হয়েছে, সেখানে তারা দাবি করেছেন পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য কমিশন গঠন করা নিয়ে। এব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে অলরেডি একটা টাস্কফোর্স আছে এবং গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে। পাচার করা অর্থ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বের করেছে, কোথায় করেছে এগুলো।’
কমিশন গঠন করার প্রয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কমিশন গঠন করার বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। অলরেডি একটা টাস্কফোর্স করেছি। এটার জন্য জাতীয় একটা কমিটিও আছে। কমিশন যখন গঠন করবে আমার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, দেখি তারা কী বলে।’
কতদিনের মধ্যে টাকা ফেরত আসতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা বলা যাবে না। কাজ তো শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। গেছে অনেক বছর ধরে, হঠাৎ করে ফেরত আসার সম্পর্কে এখন আমার কাছে জানতে চাচ্ছেন। অ্যাকটিভলি কাজ শুরু হয়ে গেছে।’
ডিম আমদানির পর ডিমের বাজারে স্বস্তি এসেছে, কিন্তু সবজির বাজারে এখনো স্বস্তি আসেনি। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সবজি সিজনাল, সবজির বাজারে স্বস্তি আসবে। সবগুলোতে স্বস্তি আসবে।
পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে গঠিত টাস্কফোর্স গত ২৯ সেপ্টেম্বর পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে।
বাজারে মানুষ এখনো স্বস্তি পাচ্ছে না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে করলে তিনি বলেন, ‘বাজারে স্বস্তি পাচ্ছে না, আমরা তো চেষ্টা করছি যতটুকু সরবরাহ করা যায়। ওপেন মার্কেটে (খোলাবাজার) আমরা দিচ্ছি, টিসিবির মাধ্যমে দিচ্ছি, টিসিবি ছাড়াও আলাদাভাবে দিচ্ছে কৃষি বিপণন করছে। কয়েকটা প্রাইভেট সংস্থা আছে তারা নিজ উদ্যোগে করছে। ওরা নিজেদের অর্থে করছে, তাদেরও আমরা এনকারেজ (উৎসাহিত) করছি।
সিন্ডিকেট ভাঙতে অন্তর্বর্তি সরকারের ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যথর্তা-সফলতার বিষয়ে আমি কিছু বলবো না।’
এদিকে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে গঠিত টাস্কফোর্স গত ২৯ সেপ্টেম্বর পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। এই টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একজন করে উপযুক্ত প্রতিনিধি।
এই টাস্কফোর্সের কার্যপরিধিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর কাজ হবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করা অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত করা ও তদন্তে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সহযোগিতা প্রদান, পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে দায়ের করা মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা ও দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ, বিদেশে পাচার করা সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ, জব্দ বা উদ্ধার করা সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য আহরণ এবং পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয়সাধন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী টাস্কফোর্সের কার্যাবলি সমন্বয় করবেন এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট টাস্কফোর্সকে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।
এর আগে ২০২২ সালের ৫ মে এ সংক্রান্ত টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি এটি পুনর্গঠন করা হয়। ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এর সদস্য ছিলেন- বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন কমিশনার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কেন্দ্রীয় ব্যাংক শাখার যুগ্ম সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের মহাপরিচালক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্সের মহাপরিচালক, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম), বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক। সদস্য সচিব ছিলেন বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের উপপ্রধান কর্মকর্তা।
###