বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট দলের কোনো জায়গা নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অভিযোগ করেন ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য’ প্রকাশ করছে।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারের বাংলাদেশের তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার ( ৩০ অক্টোবর) পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে এ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ওই অধ্যাপক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান দলটির প্রধান ও টানা ১৫ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা শেখ হাসিনা।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনুস আরো বলেন, তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে প্রত্যর্পণের চেষ্টা করবে না। এতে হয়তো বাংলাদেশ ও তার বৃহৎ প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে তার (শেখ হাসিনা) এবং আওয়ামী লীগের কোনো স্থান নেই। তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। কোনো ফ্যাসিবাদী দলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় থাকার অধিকার নেই।
প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সাম্প্রতিক নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও প্রাতিষ্ঠানিক দখলের মাধ্যমে শাসনকাজ পরিচালনা করেছে, যা শেখ হাসিনার ১৫ বছরের বেশি সময়কালের শাসনে ঘটেছে।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে আলোচনা হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে রাজনীতি থেকে স্থগিত করা, সংস্কারে বাধ্য করা, বা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত কি না। এ ব্যাপারে ড. ইউনুস মন্তব্য করেন যে, আওয়ামী লীগের ভাগ্য তার অন্তর্বর্তী সরকার দ্বারা নির্ধারিত হবে না, কারণ এটি কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়।
আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির মাধ্যমে নেয়া হবে বলে তিনি জানান। ড. ইউনূস বলেন, তাদের নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান তাদেরই ঠিক করতে হবে।
ড. ইউনুস বলেন, আমাদের কাজ হলো পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা এবং নতুন সংস্কার এজেন্ডা তৈরি করা। নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন হবে, তখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করব।
শেখ হাসিনার শাসন উৎখাত হওয়ার পর তার প্রধান মিত্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। ড. ইউনুস বলেন, তার সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে, তবে সেটা কেবল তখনই যখন অভ্যন্তরীণ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার রায় আসবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। রায় এলে আমরা তাকে ভারতের সঙ্গে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে ফেরত আনার চেষ্টা করব। রায় আসার আগে আমি মনে করি না যে, তাকে ফেরানোর কোনো ভিত্তি আছে।
হিন্দুদের বিরুদ্ধে ‘কিছু সহিংসতার ঘটনা’ এবং ‘অত্যন্ত স্বল্প সংখ্যক মৃত্যুর’ কথা স্বীকার করেছেন ড. ইউনূস। তবে তার দাবি, ধর্মের কারণে নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণেই সেইসব মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আগস্টে যেসব হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল।
বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামোগত প্রকল্পের পাশাপাশি ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্কযুক্ত ভারতের কাছ থেকে সমর্থন না পাওয়ায় তার সরকার ব্যথিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের জন্য স্বাগত জানাবেন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, আমরা এ বিষয়টিতে জোর দিতে চাই যে, আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরকে প্রয়োজন। আমাদের এমন সম্পর্ক থাকা উচিত যা যেকোনো প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়।