একজন ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে না পারবেন না, সেই বিধান তৈরিসহ রাষ্ট্র সংস্কারে সেক্টর অনুযায়ী আলাদা আলাদা ১০টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১২টায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, আ ন ম শামসুল ইসলাম, এটিএম মাছুম, সাইফুল আলম খান মিলন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, এ ১০ খাতের প্রস্তাব শুধুমাত্র অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য। নির্বাচিত কোনো সরকারের জন্য নয়। এই সরকারের কাছে আসলে আমাদের মোট ৪১টি প্রস্তাব। তার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। খাতগুলো হলো- আইন ও বিচার বিষয়ক সংস্কার, সংসদ বিষয়ক সংস্কার, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা সংস্কার (পুলিশ বাহিনীর সংস্কার, র্যাব বিষয়ক সংস্কার), জনপ্রশাসন সংস্কার, দুর্নীতি, সংবিধান সংস্কার, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্কার (বিরাজমান সমস্যার আলোকে শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাব, সংস্কৃতি সংস্কার), পররাষ্ট্র বিষয়ক সংস্কার ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সংস্কার।
দলীয় প্রস্তাব তুলে ধরে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। বিচার বিভাগ সংস্কার করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আইন কমিশন গঠন করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করতে হবে। সর্বোচ্চ পাঁচ ও তিন বছরের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। সংসদে বিরোধী দলের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধানে স্থায়ীভাবে তত্ত্বাধায়ক ব্যবস্থা যুক্ত করতে হবে। একদিনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। কোনো সরকারি চাকরিজীবী অবসরের তিন বছরের আগে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
পুলিশ বাহিনী প্রসঙ্গে প্রস্তাবে বলা হয়, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। পুলিশে ধর্মীয় শিক্ষা চালু করতে হবে। রিমান্ডে নেয়ার সময় পরিবারের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
র্যাব সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে বলা হয়, র্যাব সংস্কার করতে হবে। যাতে বাহিনীর প্রতি আস্থা ফিরে আসে। এক্ষেত্রে যারা গত ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের স্ব স্ব বাহিনীতে ফেরত পাঠাতে হবে। ডা. তাহের বলেন, জনপ্রশাসনে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সরকারি চাকরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে আবেদন বিনামূল্যে করতে হবে। কোনো ফি রাখা যাবে না। আগামী দুই বছরের জন্য চাকরিতে ৩৫ বছর, পরবর্তী সময়ে স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর করার প্রস্তাবনা করছি। চাকরিতে বিরাজমান আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে। যারা চাকরিতে থেকে দুর্নীতি ও অন্যায় করেছেন তাদের বহিষ্কার করতে হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন প্রসঙ্গে প্রস্তাবে বলা হয়, দুদকে যোগ্য, দক্ষ এবং সৎ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। এক ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এমন প্রস্তাবও জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ সময় সব শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের ইতিহাস এবং মহানবী (সা.)-এর জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি প্রস্তাব করা হয়।
আরো প্রস্তাব তুলে ধরে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, সংস্কৃতির সংস্কার করতে হবে। প্রাণীর মূর্তি নির্মাণ না করে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বিগত সরকারের আমলে সম্পাদিত চুক্তি রিভিউ করতে হবে। এজন্য একটি রিভিউ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। হজ ও ওমরাহর খরচ কমানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সব ধর্মের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।