দেশে নাগরিক সেবা পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ অপরিহার্য। স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে ব্যাংক হিসাব খোলা, চাকরিতে যোগদান, বিয়ে, জমি রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট করাসহ জীবনের ক্ষেত্রে এ সনদ দরকার হয়। কিন্তু জন্মনিবন্ধন সনদ জোগাড় করতে গিয়ে পড়তে হয় সীমাহীন ভোগান্তিতে। জন্মের এক বছরের মধ্যেই জন্মনিবন্ধনকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছি আমরা।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের বিষয়ে যতই গুরুত্ব দেওয়া হোক না কেন, এ দুই সনদ নিতে বাংলাদেশের মানুষ এখনো অনেক পিছিয়ে। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, কারিগরি ত্রুটি, আন্তরিকতার অভাব ও সেবাদানে অবহেলা, অনিয়মসহ নানা কারণে মানুষ ভুক্তভোগী হয়। ফলে সহজে সনদ পাওয়ার বিষয়টি দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ২০২৪ সালের মধ্যে জন্মের এক বছরের মধ্যে শতভাগ জন্মনিবন্ধন ও ৫০ শতাংশ মৃত্যুনিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ফলাফল হতাশাজনকই বলা যায়।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর জন্য সিআরভিএস (সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস) দশক (২০১৫-২৪) ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখান থেকেই এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। আর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে জন্মনিবন্ধন শতভাগ এবং মৃত্যুনিবন্ধন ৮০ শতাংশ করতে হবে। এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জন্মের এক বছরের মধ্যে শিশুর জন্মনিবন্ধন করাকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও সেটি এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছরের প্রথম আট মাসে এক বছর বয়সী মাত্র ৪৫ শতাংশ শিশুর জন্মনিবন্ধন হয়েছে।
৬ অক্টোবর জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস পালন উপলক্ষে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিষয়গুলো উঠে আসে। সেখান থেকে আরও জানা যাচ্ছে, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে জন্মের এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। বিলম্বিত জন্মনিবন্ধন হয়েছে ৬০ শতাংশ। মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন হয়েছে ২১ শতাংশ এবং বিলম্বিত নিবন্ধন হয়েছে ৭৯ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিবন্ধন বাড়াতে হাসপাতালগুলোয় নিবন্ধক রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন।
শুধু নাগরিক সেবা পাওয়ার বিষয় নয়, শিশুর জন্য জন্মসনদ নাগরিকত্বের আইনগত প্রমাণ। দ্রুত জন্মসনদ না হলে শিশু পাচার ও বাল্যবিবাহের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। কেউ প্রাপ্তবয়স্ক কি না, সেটা নির্ধারণের জন্য জন্মসনদ অত্যন্ত জরুরি নথি। তাই শিশুর অধিকার সুরক্ষার জন্য জন্মনিবন্ধন জরুরি। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে নিবন্ধক রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হোক। কারিগরি সক্ষমতা বাড়ানো হলেও সেটি যেন ত্রুটিমুক্ত থাকে এবং যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়, তা নিশ্চিত করা হোক।